শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুধু শিক্ষাগত চ্যালেঞ্জ নয়, রানাঘাট জেলার দুই যমজ বোন রুমা ও ঝুমা মল্লিকের গল্পটা ঠিক তেমনই – যেখানে ট্রাফিক পুলিশের এক অনন্য উদ্যোগ বদলে দিল তাদের সংগ্রামের সমীকরণ।
কঠিন পথের যাত্রী: রুমা-ঝুমার লড়াই
শান্তিপুরের বাগআছড়া গ্রামের বাসিন্দা এই বোনদ্বয়ের একজন জন্ম থেকে মুক ও বধির, অন্যজন আক্রান্ত গ্রেভস ডিজিজ নামক স্নায়ুবিক রোগে। তবুও কলা বিভাগের ছাত্রী হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি ছিল অদম্য। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব নিয়ে – বাগআছড়া হাই স্কুল থেকে ৮ কিলোমিটার দূরের শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুলে তাদের সিট বরাদ্দ হয়।

পরিসংখ্যানের আয়নায়: পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের ২০২২ রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের ৬৭% প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াতের সমস্যাকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে।
Read More – ২০২৫ সালের সেরা ইলেকট্রিক সাইকেল: জিও-এর নতুন লঞ্চ | ₹২,১৪৫-এ কিনুন
পুলিশের গাড়িতে জেগে উঠল নতুন আশা
রীক্ষার প্রথম দিন রিকশা ও অটোতে ঝাঁপিয়ে পড়েও সময়মত পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল বোনদের। এই সংকটে শান্তিপুর ট্রাফিক বিভাগের সাব-ইন্সপেক্টর দীপক শিকদার এগিয়ে আসেন অভিনব এক সমাধান নিয়ে – ফ্রি পিক-অ্যান্ড-ড্রপ সার্ভিস।
কীভাবে কাজটা হলো?
- প্রতিদিন সকালে পুলিশের গাড়ি বাড়ি থেকে বোনদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে।
- পরীক্ষা শেষে নিরাপদে ফেরত নেয়া হচ্ছে বাড়িতে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ড. অর্পিতা ঘোষের মতে, “প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিক সুবিধার পাশাপাশি মানসিক নিরাপত্তা জরুরি। পুলিশের এই পদক্ষেপ শুধু যাতায়াত নয়, তৈরি করেছে আত্মবিশ্বাস।”
Read More – PM Kisan 19তম কিস্তির স্ট্যাটাস চেক করুন
গুরুত্বপূর্ণ ডেটা:
- NCERT-এর সমীক্ষা বলছে, পরিবহন সুবিধা পেলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উপস্থিতি ৮৯% বেড়ে যায়।
- ২০১৬ সালের RPWD Act (প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার আইন) অনুযায়ী, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে Universal Accessibility মানতে বাধ্য করা হয়েছে।
বাবা প্রদীপ মল্লিকের কথায়, “মেয়েদের স্বপ্নকে সম্মান জানাল পুলিশ। এটা শুধু আমাদের পরিবারকে নয়, গোটা সমাজকে শিক্ষা দিল সহমর্মিতার।”
শান্তিপুর ট্রাফিকের এই কর্মসূচি এখন স্থানীয় স্তরে “পরীক্ষা সাথী” নামে পরিচিত